সিলেটে রাতের আধারে ডাকাত আতঙ্ক! নিরাপত্তাহীনতায় শহর ও গ্রামবাসী
মোঃ লিমন আহমদ, স্টাফ রিপোর্টারঃ সিলেটসহ আশপাশের এলাকায় গত কয়েকদিন ধরে রাত নামলেই ডাকাতদের তাণ্ডব বেড়েছে। শহর থেকে গ্রাম—কোথাও সাধারণ মানুষ নিরাপদ নয়। সংঘবদ্ধ ডাকাত দল নির্বিচারে হামলা চালিয়ে নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মূল্যবান সামগ্রী লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করতে গেলে তারা বাসিন্দাদের মারধর করতেও দ্বিধা করছে না।
গত কয়েক রাতে সিলেটের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, যা জনমনে চরম আতঙ্ক তৈরি করেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, অস্ত্রধারী এসব ডাকাত দল পরিকল্পিতভাবে হামলা চালাচ্ছে, যেন তারা আগেভাগেই নিশ্চিত হয়ে নিচ্ছে কোথায় বেশি সম্পদ আছে।
শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে পুলিশের টহল থাকলেও ডাকাতরা গ্রাম ও শহরতলির এলাকায় নির্বিঘ্নে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতায় বাসিন্দারা রাত জেগে পাহারা দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
গত মঙ্গলবার রাতে জালালাবাদ থানার মোঘলগাঁও ইউনিয়নে ছাগল ব্যবসায়ী সমর আলী (৬৫) ডাকাতদের হামলায় নিহত হন। দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তাকে হত্যা করে। ধারণা করা হচ্ছে, ছাগল বিক্রির ৩৫ হাজার টাকা লুট করতেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে। পরদিন দুপুরে পীরেরগাঁও এলাকার একটি ঝোপ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এদিকে, একই রাতে গোলাপগঞ্জ থানার পুলিশ অভিযান চালিয়ে আন্তঃজেলা ডাকাত দলের দুই সদস্য আব্দুল্লাহ আহমদ ও মো. ফয়সাল হাসানকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র জানায়, আব্দুল্লাহ আহমদের বিরুদ্ধে একাধিক ডাকাতি, চুরি ও দস্যুতার মামলা রয়েছে, আর ফয়সাল হাসানের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন অপরাধের মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
একই রাতে নগরীর সুবিদবাজার বনকলাপাড়ায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় এক যুবক গণপিটুনির শিকার হন। শরিফ আহমদ নামের ওই ব্যক্তি রিকাবিবাজার এলাকায় এক নারীর মোবাইল ছিনতাই করে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে আটক করে। পরে তার কাছ থেকে একটি ছুরি ও ছিনতাইকৃত মোবাইল উদ্ধার করা হয়। পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে এবং তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
অপরদিকে, বিশ্বনাথে মঙ্গলবার গভীর রাতে একদল ডাকাত হানা দেওয়ার চেষ্টা করলেও, স্থানীয়দের তৎপরতায় এবং পুলিশের টহলের কারণে তারা পালিয়ে যায়। তবে ঘটনার পরপরই এলাকাবাসী রাতভর পাহারা বসায়।
এছাড়া, সিলেট শহর এবং আশপাশের বিভিন্ন উপজেলায় বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।
সিলেটের ক্রমবর্ধমান অপরাধপ্রবণতা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনা সদস্যদের টহল বাড়ানো হয়েছে। বিশেষ করে, নগরীর লাক্কাতুরা থেকে ক্যাডেট কলেজ পর্যন্ত চেকপোস্ট বসানো হয়েছে এবং সন্দেহভাজন যানবাহনে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অপরাধপ্রবণ এলাকাগুলোতে বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে, যাতে দুষ্কৃতকারীরা আর কোনো নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে না পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, অপরাধীদের দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জনসচেতনতা ও সতর্কতা:
- রাতের বেলা দরজা-জানালা ভালোভাবে বন্ধ রাখুন।
- সন্দেহজনক ব্যক্তিদের দেখলে দ্রুত স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করুন।
- গ্রাম ও মহল্লায় স্বেচ্ছাসেবক দল গঠন করে পাহারা ব্যবস্থা চালু করুন।
- মূল্যবান জিনিসপত্র নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ করুন।
সিলেটসহ সারাদেশে ক্রমবর্ধমান এই অপরাধপ্রবণতা রোধে প্রশাসনের পাশাপাশি জনগণেরও সতর্ক থাকা জরুরি। তা না হলে সংঘবদ্ধ এই চক্র আরও ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে।