ajkerit

সিলেটে অবৈধ সিএনজির দৌরাত্ম্য: যানজট, দুর্ঘটনা, চুরি-ডাকাতির আখড়া, সরকার হারাচ্ছে কোটি টাকার রাজস্ব!


বিশেষ প্রতিবেদকঃ সিলেটের রাস্তায় নম্বরবিহীন অবৈধ সিএনজি অটোরিকশার দৌরাত্ম্য এখন চরমে। যানজট, দুর্ঘটনা, ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন, চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে এই অবৈধ পরিবহন ব্যবস্থা। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার হলো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সামনেই এগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, অথচ কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগের সীমা ছাড়িয়ে গেছে, বৈধ সিএনজি মালিকরা ব্যবসা হারাচ্ছেন, আর সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বৈধভাবে নিবন্ধিত সিএনজির সংখ্যা দিন দিন কমছে। কারণ বৈধ সিএনজি চালকদের নিয়ম মেনে চলতে হয়, অথচ অবৈধ সিএনজিগুলো কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই অনায়াসে রাস্তায় চলাচল করছে।

সিলেট সিএনজি মালিক সমিতির এক সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "আমরা বৈধভাবে গাড়ি চালাই, সব নিয়ম মেনে লাইসেন্স করি, অথচ অবৈধ সিএনজিগুলো কোনো নিয়ম না মেনেই রাস্তায় দাপিয়ে বেড়ায়। এতে বৈধ সিএনজির যাত্রী কমে যাচ্ছে, মালিকরা আর ব্যবসা করতে পারছেন না। ফলে আমরা লোকসানের মুখে পড়েছি, আর সরকার কোটি কোটি টাকার রেমিট্যান্স হারাচ্ছে।"

সরকার বৈধভাবে নিবন্ধিত সিএনজি থেকে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের রাজস্ব পেত, কিন্তু অবৈধ সিএনজির আধিপত্যের কারণে সেই রাজস্ব এখন প্রায় শূন্যের কোটায়। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণের জন্য দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। অবৈধ সিএনজির কারণে যানজট সৃষ্টি হওয়া তো পুরনো সমস্যা। এখন এর চেয়েও ভয়াবহ বিষয় হলো এসব সিএনজিকে ব্যবহার করে চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই বেড়ে গেছে।


সম্প্রতি একাধিক ভুক্তভোগীর বক্তব্যে উঠে এসেছে, নম্বরবিহীন সিএনজি ব্যবহার করে রাতের বেলায় ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে। এসব অপরাধী ধরা পড়ে না, কারণ গাড়ির কোনো রেজিস্ট্রেশন নেই, মালিকের তথ্য নেই, ট্র্যাক করার কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে অপরাধীরা খুব সহজেই সিলেটের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ করে গা ঢাকা দিতে পারছে।

এক ভুক্তভোগী বলেন, "কয়েকদিন আগে এক বন্ধুর সঙ্গে ক্বিনব্রিজ এলাকা থেকে বাসায় ফিরছিলাম। তখন এক সিএনজিতে উঠে দেখি, চালক অন্য রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই আমাদের ওপর ছুরি ধরে সব নিয়ে নেয়। পরে পুলিশকে জানালেও কোনো লাভ হয়নি, কারণ গাড়ির কোনো নম্বরই ছিল না!"

বিশেষ করে কদমতলী থেকে গোলাপগঞ্জ রোড, হুমায়ুন রশিদ চত্বর থেকে মোগলাবাজার রোড, ক্বিনব্রিজ থেকে চন্ডিপুল হয়ে রশিদপুর পর্যন্ত এবং বাবনা পয়েন্ট থেকে কামালবাজার পর্যন্ত এলাকায় এ ধরনের ঘটনা অহরহ ঘটছে।

নম্বরবিহীন অবৈধ সিএনজি সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ট্রাফিক পুলিশ বলেন, "আমি এগুলো জানি না।" তার এমন বক্তব্যে বিস্মিত সাধারণ মানুষ। সড়কে প্রতিদিনই এই যানবাহনের কারণে ভোগান্তি বাড়ছে, অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিকার।

এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, "যাদের এগুলো দেখার দায়িত্ব, তারাই চোখ বন্ধ করে আছে। ট্রাফিক পুলিশ জানে যে এগুলো বন্ধ করলে তাদের ওপর ‘উপরমহলের’ চাপ আসবে। এ কারণেই কেউ মুখ খুলতে চায় না।"

অন্যদিকে, একজন সাধারণ যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "এই শহরে কোনো নিয়ম নেই। যেখানে-সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখে, যাত্রী তোলে, আবার ডাকাতির কাজেও এগুলো ব্যবহার হয়। এগুলো বন্ধ করা না হলে মানুষ চলাচলই করতে পারবে না!"

এ বিষয়ে কথা হয় এক শ্রমিক নেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, "সিলেটে যাত্রী বেশি, কিন্তু বৈধ সিএনজি কম। এ কারণে নম্বরবিহীন সিএনজি চলে। সরকার যদি পর্যাপ্ত রেজিস্ট্রেশন দিত, তাহলে এত অবৈধ গাড়ির প্রয়োজন হতো না।"


তবে সাধারণ মানুষ এই যুক্তি মানতে নারাজ। এক ব্যবসায়ী বলেন, "আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতির কারণেই এই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। অবৈধ সিএনজিগুলো রাস্তা দখল করে রাখে, ইচ্ছেমতো ভাড়া নেয়, আবার রাতের বেলা ছিনতাই-ডাকাতিতে ব্যবহৃত হয়।" সিলেটের জনগণ এখন প্রশ্ন তুলছে—এভাবে আর কতদিন অবৈধ যানবাহনের দাপট সহ্য করতে হবে? প্রশাসন কি এই সমস্যার সমাধান করবে, নাকি মুষ্টিমেয় কিছু সুবিধাভোগীর কারণে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে? বিশ্লেষকরা বলছেন, "যদি প্রশাসন কঠোর হয়, তাহলে এক সপ্তাহের মধ্যেই সব অবৈধ সিএনজি সড়ক থেকে সরিয়ে ফেলা সম্ভব। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তারা কি তা করবে?"

সচেতন নাগরিকরা এখন কার্যকর অভিযানের অপেক্ষায় রয়েছেন। প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এই সমস্যা সমাধানে সত্যিই উদ্যোগ নেয় কি না, নাকি পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে!

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
ajkerit
ajkerit