সিলেটের ৬টি আসনে ধানের শীষের দৌড়ে কারা এগিয়ে? লবিং-তদবির তুঙ্গে, উত্তপ্ত রাজনৈতিক মঞ্চ!
বিশেষ প্রতিবেদকঃ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা না হলেও সিলেটের ৬টি আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ এখন তুঙ্গে! দলীয় টিকিট নিশ্চিত করতে কেউ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে লবিং করছেন, কেউ আবার মাঠপর্যায়ে নেতাকর্মীদের মন জয় করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ, সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের হিড়িক পড়েছে। এমনকি ঢাকা-লন্ডন পর্যন্ত তদবির চলছে মনোনয়ন নিশ্চিত করার জন্য!
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, “দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির জন্য এবারের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই মনোনয়ন পাওয়ার লড়াই আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি প্রতিযোগিতাপূর্ণ হয়ে উঠেছে।”
সিলেট-১ (সদর ও সিটি করপোরেশন):- এ আসনে ধানের শীষের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এগিয়ে রয়েছেন সাবেক এমপি মরহুম খন্দকার আব্দুল মালিকের পুত্র খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির। তবে সাম্প্রতিক গুঞ্জন বলছে, সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীও এ আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন! সিলেট-১ আসনের অনেক নাগরিকই তাকে চান, ফলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে বদলে যেতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ-ওসমানীনগর):- এ আসনে বিএনপির ‘সেন্টিমেন্টের প্রতীক’ হয়ে রয়েছেন গুম হওয়া নেতা এম ইলিয়াস আলীর সহধর্মিণী তাহসিনা রুশদির লুনা। ইলিয়াস আলীর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি এগিয়ে থাকলেও, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে চূড়ান্ত মনোনয়ন।
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ):- এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি ব্যারিস্টার আব্দুল সালাম, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির বর্তমান সভাপতি আব্দুল মালেক। বিশেষ করে আব্দুল মালেকের দেশে ফেরার পর তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দলের হাইকমান্ডের ওপর নির্ভর করছে।
সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ):- এ আসনে মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেবুন নাহার সেলিম, লন্ডন প্রবাসী হেলাল আহমদ ও সাবেক সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। আরিফুল হক চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় এবং তৃণমূলে তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে নতুন গুঞ্জন বলছে, দলের হাইকমান্ড তাকে সিলেট-১ আসনে মনোনয়ন দিতে পারে! ফলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে তিনি কোন আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ):- এ আসনে মনোনয়নের দৌড়ে রয়েছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিদ্দিকুর রহমান পাপুল ও সহ-সভাপতি মামুন। তবে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমীকরণের কারণে এ আসনে চমক আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার):- এ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় রয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, সাবেক জেলা বিএনপি সভাপতি আবুল খায়ের চৌধুরী শামীম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী ও জেলা বিএনপি নেতা ফয়সল আহমদ চৌধুরী।
সিনিয়র নেতারা বলছেন, এবারের নির্বাচনে শুধু মাঠপর্যায়ের জনপ্রিয়তা নয়, কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত ও লন্ডনের সমর্থনই মনোনয়ন নির্ধারণে মূল ভূমিকা রাখবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, “যে প্রার্থী ভোটের মাঠে টিকে থাকার মতো শক্তিশালী, তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে। তবে রাজনীতিতে শেষ মুহূর্তের চমকের অভাব কখনোই হয় না!” সিলেটের জনগণের প্রশ্ন—শেষ পর্যন্ত কারা ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে ভোটের ময়দানে নামবেন? কৌশলী রাজনীতির খেলায় কে হাসবেন শেষ হাসি?